:: চপল মাহমুদ ::
বিশ্বের সাহিত্যের সঙ্গে বাংলাদেশর মেলবন্ধন নিয়ে ঢাকায় শুরু হলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ এর নবম আসর। ১৮টি দেশের প্রায় তিনশ লেখক-সাহিত্যিক-চিন্তাবিদের অংশগ্রহণে এবারের আসর। গতকাল সকালে বাংলা একাডেমিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথের শিল্পসৃষ্টি ‘পঞ্চভ‚ত’ নিয়ে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন সাধনা নৃত্যগোষ্ঠী। এরপর কথা বলেন আয়োজনের পরিচালক ও অতিথিরা। সকালে লিট ফেস্টের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ম্যানবুকার পুরস্কারের চ‚ড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া সাহিত্যিক মনিকা আলী। এসময় আরও ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্, কাজী আনিস আহমেদ এবং আহসান আকবর, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ও ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বাংলা সাহিত্যকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেই ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজন। আর এই উৎসব একদিন বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে বিশ্বের দরবারে। এর আগে হে ফেস্টিভ্যাল ছিল বহির্বিশ্বের সাহিত্যকে বাংলাদেশে পরিচিত করার জন্য। ঢাকা লিট ফেস্টের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে। আগামী বছর এই আয়োজনের শ্রী এবং মান আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মণিকা আলী বলেন, আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি গর্বিত। ১৯৭১ সালে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি। তারপর আর আসা হয়নি। এখন ঠিক করে বাংলা ভাষাটাও বলতে পারি না। এজন্য অবশ্য দুঃখ হয়। এত সমৃদ্ধ যে ভাষা, সে ভাষা আমি জেনেও ভুলে গেছি। তবে এ ভাষার প্রতি ভালোবাসাটা কমেনি। তবে সবকিছুর পরেও এই বাংলা ভাষা আমার বেড়ে ওঠা এবং লেখালেখির প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এ আয়োজন আমাদের হৃদয়ের সংযোগ, মস্তিস্কের সংযোগ, বিশ্বরেখায় পথযোগাযোগ। এ আয়জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা থেকে উপাদান নিয়ে আমরা যেন আমাদের সাহিত্যে তা স্থাপন করতে পারি, সে মনরূপ আমাদের সৃষ্টি হোক।
ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ বলেন, ‘আজকের দিনে ঢাকা লিটারেচার ফেস্টিভাল সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মুক্তচিন্তা এবং বাক স্বাধীনতার জন্য। এ উৎসব আমাদের সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যে আরো পরিচিত করে তুলবে। প্রতিবছরের মত এবারের আয়োজনেও বিশেষ করে দেশ ও বিদেশের সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাকস্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।’
বরাবরের মত এবারের আয়োজনেও বিশ্বনন্দিত শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধুজীবীরা প্রায় শতাধিক অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা লিট ফেস্টে আসতে পারে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন ম্যানবুকারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনীত সাহিত্যিক মনিকা আলী। এসময় তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
এবারের উৎসবে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে অংশ নিচ্ছেন- ম্যানবুকার পুরস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত সাহিত্যিক মনিকা আলী, ‘চৌরঙ্গী’ খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত সাহিত্যিক শংকর, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লেখক জেফরি গেটলম্যান, ডিএসসি অ্যাওয়ার্ড ফর সাউথ এশিয়ান লিটারেচার পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক এইচ এম নাকভি, ইতিহাসভিত্তিক লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পল, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও লেখক শশী থারুর, কবি তিশানি দোশি, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত, ভারতীয় সাংবাদিক প্রেয়াগ আকবর, ফিনিশ সাংবাদিক মিন্না লিন্ডগ্রেন, ব্রাজিলের কথাসাহিত্যিক ইয়ারা রড্রিগেজ প্রমুখ।
বাংলাদেশের শিল্পী, সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন- কবি আসাদ চৌধুরী, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন, শাহীন আখতার, মোস্তফা কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, ফখরুল আলম, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, কামাল চৌধুরী, আফসান চৌধুরী, কাইজার হক, খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ।
Leave a Reply