:: চপল মাহমুদ ::
শেকড়ের সুরের শিহরণ জাগিয়ে সঙ্গীতানুরাগিদের মাঝে ঝড় তুললেন লোকসঙ্গীতের শিল্পীরা। সুরের আবেদন যে চিরন্তন সেটা ফুটে উঠলো আর্মি স্টেডিয়ামের সুরের মেলায়। অস্তিত্বের পরিচয়ের মাটির সুরমিশ্রিত লোকসঙ্গীতের রস পরাণের গহীণেও আকুতির সৃষ্টি করে। মঞ্চ থেকে সুরের আলো ছড়ালেন শিল্পীরা।
আর আলোকের ঝর্ণাধারায় বিমোহিত হলো এদেশের অগণিত সঙ্গীতপিপাসুরা। দুইদিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও ছিল শ্রোতাদের উন্মাদনা। আর্মি স্টেডিয়ামের অগণিত দর্শক শ্রোতাদের সুরের ¯্রােতে ভাসিয়ে গতকাল তিনরাতের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব ২০১৯’ এর পর্দা নামলো। এটি ছিল উৎসবের পঞ্চম আসর।
সমাপনী আসরের শুরুতেই কাওয়ালি ও দেহতত্তে¡র গান নিয়ে মঞ্চে আসেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পী আব্দুল মালেক কাওয়াল। ভাবের নদীরে ঢেউ তুলে আর্মি স্টেডিয়ামভর্তি সুরের অনুরাগিদের মাঝে ভিন্ন রকম দ্যোতনার সৃষ্টি করেন কাওয়ালি ঘরানার এই শিল্পী। নিজের পরিবেশনা দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আগত সুরের কাঙ্গালদেরকে ধ্যানমগ্ন করেন এই শিল্পী।
সুফি ঘরাণার গান ‘ইশকে নবী ক্যায়া ভুল গায়ি’ দিয়ে সুরের ঝাঁপি খোলেন এই শিল্পী। এরপর একে এক তিনি পরিবেশন করেন ‘হযরত-এ-ইসমে আযম, ইয়া আলী, নূর-এ-মোহাম্মদ হাবীব আল্লাহ,বাবা মওলানা মওলানা এই ভুবনে নেই তোমার তুলনা,খাজা পিয়াহে দিল্লীতে হে খাজা পিয়া।
সমাপনী রাতের দ্বিতীয় রাতের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করা রাশিয়ার লোকগানের দল সাত্তুমা। ‘নিওফোক’ টাইপের গান দিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে এদেশীয় সঙ্গীতানুরাগিদেরকে বিনোদিত করেন এই দলটি।
ম্যান্ডোলিন, বাঁশি, ভায়োলিনের সংযোগে রাশিয়ার লোকসঙ্গীতের সুধা আর্মি স্টেডিয়ামে ছড়িয়ে দেন রাশিয়ার কারেলিমা অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটি। নিজ দেশ রাশিয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সুরের সুধা ছড়িয়ে এবার লাল-সবুজের পতাকার এই দেশের সঙ্গীতানুরাগিদেরকে সুরের ভেলায় ভাসালেন গানের দল ‘সাত্তুমা’। এরপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের চন্দনা মজুমদার। সুর দরিয়ায় টান দিয়ে সমাপনী রাতে দ্যোতনা ছড়িয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন চন্দনা মজুমদার। সবশেষে মঞ্চে আসেন এ রাতের প্রধান আকর্ষণ পাকিস্তানের ব্যান্ড ‘জুনুন’।
সুফি ও রক ঘরানার ফিউশন ঘটিয়ে সঙ্গীতের এই মিলনমেলায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেন দ্ইু যুগের বেশি সময় ধরে সঙ্গীতাঙ্গনে দাপুটের সাথে এগিয়ে চলা উন্মাদনা সৃষ্টি করা এই ব্যান্ডটি। ১৯৯৭ সালে ‘আজাদী’ অ্যালবামটি দিয়ে উপমহাদেশের সঙ্গীতের ভুবনে রেকর্ড তৈরি করেন।
তাদের ‘ছাইওনি’গানটি একসময় নিজ দেশ পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গীতপাগলদের মাঝে ব্যাপক উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। আর এবার সরাসরি দর্শক-শ্রোতারা উপভোগ করেছে তাদের প্রিয় এই ব্যান্ডটির গান।
‘জুনুন’এর উন্মাদনা ছড়িয়েই আর্মি স্টেডিয়ামে গতকাল শেষ হয় তিনরাাতের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব ২০ঙ১৯’।
সান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবারের উৎসবের স্পন্সর মেরিল। এবারের উৎসবে অংশ নিয়েছে ছয় দেশের প্রায় দুই শতাধিক শিল্পী। তিনরাতের এই আসরটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে মাছরাঙা টেলিভিশন।
Leave a Reply