:: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ::
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। এ অবস্থায় সমাজপতিরা ওই পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা পরিবারটিকে একঘরে করে রাখার কথা জানালেও অস্বীকার করেছেন সমাজপতিরা।
আর এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এদিকে, ন্যায় বিচার চেয়ে নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে ধর্ষক মোহিন চন্দ্রের বাড়িতে ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারটি।
জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধুকুরঝাড়ি টাকাহারা গ্রামের মুসলিম দরিদ্র পরিবারের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীকে নানা প্রলোভনে প্রতিবেশী কলেজ ছাত্র মোহিন চন্দ্র সিংহ ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানায় মামলা হওয়ার পর এলাকা থেকে লাপাত্তা ধর্ষক মোহিন।
গত ২৭ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। বাড়ি ফেরার পর থেকে ওই পরিবারের প্রতি বিরুপ আচরণ শুরু করেন প্রতিবেশীরা। হতদরিদ্র পরিবারটিকে প্রায় কোণঠাসা করে রেখেছেন প্রতিবেশীরা। ফলে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না কুমারী মা। ঘরবন্দি জীবন থেকে মুক্তি চেয়ে ওই কলেজ ছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
এ অবস্থায় ওই পরিবারের বড় মেয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘একদিকে অর্থের অভাবে জেএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারিনি। অন্যদিকে শিক্ষকদের নিরুৎসাহিত করার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। শুধু তাই নয়, স্কুলের সহপাঠীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাথে মিশতেও নিষেধ করেছেন। তাই এখন লেখাপড়াতেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।’
গ্রামের সমাজপতিরা পরিবারটিকে এক ঘরে করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীর মা অভিযোগ করেন, ‘প্রতিবেশীরা নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। তাদের দেখলে প্রতিবেশীরা দূরে চলে যায়।’ অভাব অনটনের মধ্যে জন্ম নেয়া নবজাতকের ভরণপোষণ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। তাই শিশুটিকে দত্তক দিতে চায় পরিবারটি। দ্রুত এই ঘটনার সমাধান চান ওই কিশোরীর বাবা।
স্থানীয় প্রতিবেশী জবেদা বেগম ও আব্দুর রশিদ বলেন, পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে। ভাল করে কেউ কথাও বলছেন না। প্রতিবেশীরা ওই পরিবারকে একঘরে করে রাখার কথা জানালেও সমাজপতিরা তা অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় সমাজপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে বাড়িটিতে লোকজন কম যায়।
আর ধনতলা ইউপি চেয়ারম্যান সমর কুমার চ্যাটার্জি বলেন, সমাজচ্যুত করে রাখার খবর জানা নেই। তবে এমন পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেয়াসহ আইনী সহায়তাও দেয়া হচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, প্রধান আসামি মোহিন পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। ডিএনএ টেস্টের পরই এ ঘটনার চার্জশিট প্রদান করা হবে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, কিশোরীর মা হওয়া ও ধর্ষক পলাতক থাকার কথা জানি। তবে ওই পরিবার সমাজচ্যুত আছে – এটা জানি না। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সহায়তা চাইলে জেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
Leave a Reply