:: চপল মাহমুদ ::
সংস্কৃতি সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেছেন- বাংলাদেশের স্বাধীনতা একদিনে অর্জন হয়নি। চ‚ড়ান্ত রূপ পায় ১৯৭১ সালে। এরপর ১৯৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়েছিল। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু থেকে দুরে রাখা হয়েছিল। এই ইতিহাস বিকৃতি রোধে এ ধরনের সম্মেলনের প্রয়োজন রয়েছে। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংস্কৃতি সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংস্কৃতি সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘১৯৭১ – এর গণহত্যা, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এবং বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে আয়োজিত এই অধিবেশনে অতিথিদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের জুলিয়ান ফ্রান্সিস, কম্বোডিয়ার কুম সোমালি, ভারতের ড. সঞ্জয় কে. ভরদ্বাজ, মিয়ানমারের ড. খিন জ উইন, তুরষ্কের ফেরহাত আতিক, বাংলাদেশের শাহরিয়ার কবির। সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতিক।
২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারত, ইতালি, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশ থেকে ৫০ জন বিশেষজ্ঞ গবেষক প্রতিনিধিরা আলোচনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সভাপতির বক্তৃতায় ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ধ্বংসপ্রায় স্বাধীনতার চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে গণহত্যা জাদুঘর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন সেই প্রচেষ্টারই অংশ। গণহত্যা জাদুঘরকে সংস্কৃতিমন্ত্রনালয় যে সহযোগীতা করছে ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
সমাপনী বক্তব্যে ড. মুনতাসীর মামুন একাত্তরের গণহত্যা-নির্যাতনের কয়েকটি নিদর্শন তুলে ধরে বলেন, গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ইতিহাসকে আমাদের জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবেনা। এই ইতিহাস উঠে আসবে গণহত্যা নির্যাতনের ইতিহাসের মাধ্যমে। যারা গণহত্যা করেছে, যারা এর সমর্থন করে তারা সমানভাবে অপরাধী। তারা মানবসমাজের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।
মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এসবের বিরুদ্ধে লড়তে এর প্রয়োজন অত্যাধিক। দেশের প্রতি আমাদের যে ঋণ তা আমরা শোধ করতে না পারলেও, স্বীকার তো করতে পারি।
এছাড়াও গতকাল বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর ৬ষ্ঠ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এবং বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর উদ্যোগে‘ ১৯৭১ – এর গণহত্যা, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন শেষে সম্মিলনীর কার্য অধিবেশন বসে। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ স¤পাদক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ড. মনিরুজ্জামান শাহীন ও ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। জেলা প্রতিনিধিদের মধ্য বক্তব্য রাখেন দিনাজপুরের মোজাম্মেল বিশ্বাস, কুমিল্লার হাসান ইমাম মজুমদার, রাজশাহীর কামরুজ্জামান, পাবনার ড. মো. হাবিবুললাহ, বরিশালের ড. এস এম কাইয়ুম উদ্দিন আহমদ, খুলনার অমলগাইন প্রমুখ।
কর্ম অধিবেশনে জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পুরষ্কার প্রদান করা হয় রেহানা পারভীন ও হোসনে আরা খানম-কে।
অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমানকে সভাপতি এবং চৌধুরী শহীদ কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করে সম্মিলনীর নতুন কমিটি গঠিত হয়। সম্মিলনীর উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি মনোনীত হয়েছেন ড. মুনতাসীর মামুন।
কর্ম অধিবেশনে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল রাজশাহশ নানা জেলা থেকে তিনশজন শিক্ষক সাংবাদিক গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক গবেষক ইতিহাস প্রেমিনানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন।
Leave a Reply