:: নিউজ বুক প্রতিবেদক ::
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো বিচার হয়নি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের। স্বীকৃতিও পাননি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে।
১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার এবং শান্তি কমিটির লোকেরা ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আরফান আলীর চায়ের দোকান থেকে তাকে ধরে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার লাশ মধুপুর বংশাই নদীতে ফেলে দেয়। সেই থেকেই শহীদ শিক্ষক সদানন্দের পরিবারের সকল সদস্যই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ওরা ৪৮ বছর ধরে কাঁদছে।
কিন্তু আজো বিচার পায়নি শহীদ শিক্ষকের স্বজনরা। এই কান্না বুকের ভিতর চেপে রেখেই চলছে ওদের দূর্বীসহ জীবন। একদিকে প্রিয় মানুষটি হারানোর বেদনা আর অন্যদিকে জীবন যাপনের যন্ত্রনা এ নিয়ে করুন কষ্টে পার করছে দীর্ঘ ৪৮টি বছর। শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের স্ত্রী খুকী বালা দেবনাথও অনেক কষ্ট ভোগ করে গত ২০১৫ সালে ৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করে। ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালি ইউনিয়নের দয়ারামবাড়ী গ্রামের মৃত দীনবন্ধু দেবনাথের ছেলে শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথ। মাতা মৃত ভূবন বালা দেবনাথ। জন্ম ১৯২০ সালে।
শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের পরিবারের সদস্যরা হলেন, ৩ ছেলে অমল দেবনাথ, কমল দেবনাথ ও দিগেন দেবনাথ এবং মেয়ে পলানী রাণী দেবনাথ। অমল দেবনাথ প্রতিবন্ধী। কমল দেবনাথের স্ত্রী শিখা রাণী দেবনাথ। তাদের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে। শিখা রাণী দেবনাথ প্রতিবন্ধী অমল দেবনাথ আর ২ সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে শ্বশুড়ের এ বাড়ীতে বসবাস করছেন।
এলাকাবাসী ও তার স্বজনরা বিডি নিউজ বুক টোয়োন্টিফোর ডট নেটকে জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথ তার বেতনের জন্য ধনবাড়ী পোষ্ট অফিসে আসেন। যদিও তৎকালিন পোষ্ট অফিসের পিয়ন তারাপদ তার মাসিক বেতন বাড়ীতেই দিয়ে আসতো। ছোট বেলা থেকেই ধনবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী সূর্য্যকান্তর মিষ্টি তার খুবই প্রিয় ছিল। চায়েও ছিল তার দারুন নেশা। বেতন উঠিয়ে সুর্য্যকান্তের মিষ্টি খেয়ে ধনবাড়ী বাসষ্ট্যান্ডে চা পান করার জন্য আরফান আলীর চায়ের দোকানে আসেন। আর বসা মাত্রই তাকে ধরে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরা।
তারা জানান, শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথ শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না। এলাকায় ডাক্তার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। তিনি একজন সমাজহিতৈষী ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। তার ছাত্রদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সাবেক সচিব মরহুম শেখ নিয়ামত আলী, বাংলাদেশ টাইমস এর সাবেক সম্পাদক ও বর্তমানে কর্মরত ডেইলি নিউ নেশনের উপদেষ্টা আবু মো. মোফাজ্জল, ঢাকা চেম্বার এন্ড কমার্সের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু মোঃ মোবাশ্বরসহ তার অনেক ছাত্রই দেশ বিদেশের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং আছেন।
তারা আরো বিডি নিউজ বুক টোয়োন্টিফোর ডট নেটকে জানান, শহিদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের হত্যাকারী রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরা এখনও এলাকায় বীরদর্পে চলাফেরা করে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের একটাই দাবী খুনিদের বিচার।
ধনবাড়ী উপজেলার দয়ারামবাড়ী গ্রামের বাড়ীতে কথা হয় শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের পুত্রবধু শিখা রাণী দেবনাথের সাথে।
তিনি বিডি নিউজ বুক টোয়োন্টিফোর ডট নেটকে জানান, কিভাবে এতো ভালো মানুষটাকে রাজাকাররা নৃশংসভাবে মেরে ফেললো। যাদের তিনি ভালোবাসতেন তারাই তাকে হত্যা করলো। তার লাশটাও এ পরিবারের সদস্যরা পেল না। আমি এ হত্যার বিচার ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বীকৃতি চাই। তিনি আরো জানান, আমি স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করে অনেক কষ্টে এ সংসারের হাল ধরে আছি এবং দূর্বিষহ জীবন যাপন করছি।
ধনবাড়ী সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন কালু বিডি নিউজ বুক টোয়োন্টিফোর ডট নেটকে জানান, পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত তালিকায় সদানন্দ দেবনাথ স্যারের নাম ১ নম্বরে রেকর্ড রয়েছে। তার পরিবারকে সরকারী সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের অনুরোধও জানিয়েছি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে শহীদ সদানন্দ দেবনাথ স্যারের হত্যাকারিদের বিচার চাই। এই সব রাজাকারদের বিচার হবে বাংলার মাটিতেই। এজন্য আমরা সরকারকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করতে চাই।
এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বিডি নিউজ বুক টোয়োন্টিফোর ডট নেটকে জানান , স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল-সামসরা ‘৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিরপরাধ অসহায় বাঙালীদের ধরে-ধরে হত্যা করেছে। কাজেই সদানন্দ স্যারের হত্যাকান্ডটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাজাকাররা আমাদের সকলের প্রিয় সদানন্দ স্যারকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু মানুষ হত্যাই নয়, তারা মা-বোনদের ইজ্জতও হরণ করেছে। জঘন্যতম এই ঘটনা ঘটানোর ৪৮ বছর পরও তাদের কোন অনুশোচনার সৃষ্টি হয়নি। তারা কখনও জাতির কাছে ক্ষমা চাইনি। এমনকি ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি। তাই বাংলার জনগণ তাদের বিচার করার জন্য বারবার বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে। কাজেই সরকার ঐসব মানবতা বিরোধীদের বিচার দ্রæততম সময়েই করবে ইনশাল্লাহ।
Leave a Reply