:: নিউজ বুক ডেস্ক ::
আজ ২২ জানুয়ারি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
১৯৭২ সালের এই দিনে স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন তিনি। মওলানা ভাসানী মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ভারত সরকার গৃহবন্দী দশা থেকে মুক্তি প্রদানের পর মাওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন। ১৯৭২-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক-কথা প্রকাশ করেন।
ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে থেকেই মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহন করেন। কিন্তু ৪-৬ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোষররা মিলে টাঙ্গাইলের সন্তোষ এবং বিন্যাফৈরে তাঁর বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৫-১৬ এপ্রিল তিনি ধলেশ্বরী-যমুনা হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতে বসেই তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
বস্তুত স্বাধীনতা যুদ্ধকালীণ পুরোটা সময় তিনি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আগলে রেখেছিলেন অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অনুরোধ বার্তা পাঠিয়েছেন। ভারতের পত্র পত্রিকাও মওলানা ভাসানীর সেসব বক্তব্য বিবৃতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করে। অতঃপর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরিতাপ ও পরিহাসের বিষয় মুক্তযুদ্ধ শেষে কেউই তাঁর খোঁজ রাখেন নি।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ১২ দিন পর ঢাকায় পত্রপত্রিকায় মওলানা ভাসানীকে নিয়ে নানা ধরনের লেখালেখি শুরু হলে ভারত সরকার মওলানাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।
ভারতের দিল্লী থেকে দেশে ফেরার আগে তিনি ২১ জানুয়ারি আসামের ফরিদগঞ্জে এক জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দীর্ঘ ইতিহাস, পাকিস্তানের বর্বরতা ও ২৩ বছরের শোষণের একটি চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি তিনি ভারত সরকারের একটি জীপে করে মেঘালয় হয়ে বাংলাদেশের হালুয়াঘাট সিমান্তে পৌঁছান। হালুয়াঘাটে তাঁকে মামুলি অভ্যর্থনা জানান ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীণ জেলা প্রশাসক খসরুজ্জামান চৌধুরী ও স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ তাঁর ভক্ত অনুসারীরা।
দীর্ঘ যাত্রা শেষে ক্লান্ত শরীরে ঐ দিনই শেষ রাতে তিনি পৌঁছান টাঙ্গাইলের সার্কিট হাউসে। পরদিন সকাল বেলা স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ভক্ত অনুসারীরা তাঁকে দেখার জন্য দলে দলে সমবেত হন সার্কিট হাউস ময়দানে। বহুদিন পরে দেশে ফিরে এবং নিজের পরিচিত মূখগুলো দেখতে পেয়ে তিনি আপ্লুত হয়ে পরেন।
পকেট থেকে দশ টাকার একটি নোট বের করে এক মুরীদকে পাঠান সন্দেশ আনতে। সাথে আরও টাকা যোগ হয়ে সন্দেশ এল; হলো মিষ্টিমূখ। এবারে তিনি চললেন তাঁর প্রিয়প্রাঙ্গণ সন্তোষে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানী সেনারা তাঁর সন্তোষের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। পোড়া ভিটায় তিনি ঘুরে ঘুরে দেখলেন সবকিছু; দির্ঘশ্বাস ফেললেন! বিশেষ করে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলের হাতে লেখা কুরআন শরীফের জন্য তিনি আফসোস করতে লাগলেন। এলাকার মানুষজনের খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন। অনেকের নিহত হওয়ার কথা শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পরলেন। তীব্র শীতে ভক্ত অনুসারীরা যখন তাঁর থাকার ব্যবস্থা করার জন্য শসব্যস্ত হয়ে পরলেন, ভাসানী তখন মাটির মেঝেতে নাড়া আর খড় বিছিয়ে ওপরে কাঁথা দিয়ে বিছানা তৈরী করে দিতে নির্দেশ দিলেন। কথামত হলোও তাই।
এরপর প্রিয় মাতৃভূমির কোলে শিশুর মতন ঘুমিয়ে পড়লেন ক্লান্ত ভাসানী। এভাবেই স্বাধীন দেশে মাটির শয্যায় প্রথম রাত্রী কাটালেন আমাদের মুকুটহীন সম্রাট মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী।
Leave a Reply