:: চপল মাহমুদ ::
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ ও বিপণনে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের স্বার্থে সার, সেচ, ইক্ষুচাষসহ কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ ৯০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রদান করেছে।
ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে বোরো ধান কাটার শ্রমিকের সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাওর অঞ্চলের ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। হাওরে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক প্রভৃতি উপকরণ প্রদান, নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আলাদা গাড়ি, নির্বিঘ্ন গমনাগমন, ধান কাটা স্থলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রাখার ব্যবস্থা ইত্যাদি কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষি শ্রমিকগণ হাওরে যাওয়া শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
আশা করা যায়, হাওরে ধান কাটায় কোন সমস্যা হবে না। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে করণীয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নিয়ে ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করেছেন। এর সুদ ৪% হলেও কৃষিখাতে ৯০০০ কোটি টাকার ভর্তুকিসহ অন্যান্য প্রণোদনা বিবেচনায় নিলে এটি অত্যন্ত ভাল। এ প্রণোদনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষির সকল সেক্টরে ‘মৎস্য ও প্রাণি’ খাতসহ সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, এসব প্রণোদনার বাইরেও কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি পুনর্বাসনে ১২০ কোটি টাকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ ও সমবায়ভিত্তিক (সমলয়ে) চাষাবাদের জন্য ৫০ কোটি টাকা এবং ফসলে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণকরণ বাবদ ৭৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করেছে। অতিসম্প্রতি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও বীজ, সেচ ইত্যাদিসহ কৃষিখাতে সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া, কৃষিযান্ত্রিকীকরণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকার মাধ্যমে প্রায় ৮০০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সমপরিমাণ কৃষি যন্ত্রপাতি অচিরেই কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে চাষযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ১৩ লক্ষ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি, রোপণ, সেচসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রণোদনা হিসেবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার, বীজ প্রভৃতি বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, বসতবাড়ির আঙিনাসহ সকল পতিত জমিতে শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য ফসলের চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
আউশ উৎপাদনের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সাধারণত প্রতিবছর ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদিত হয়। আসন্ন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন। সেজন্য আসন্ন আউশ মৌসুমে বিএডিসির সেচের রেট ৫০% হ্রাসের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং ৬৫০০ মেট্রিক টন হাইব্রিড ও উফশি জাতের বীজ ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
এসময় কৃষিমন্ত্রী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, করোনাকালীন সাধারণ ছুটির সময় কৃষি কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন সকল কর্মকর্তাদের স্বস্ব কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে নিয়মিতভাবে মাঠে গিয়ে এই দুর্যোগময় অবস্থায় কৃষকের সাথে, কৃষকের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। যারা কর্মস্থলে থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply