বিশ্বব্যাপী মহামারী রুপ নেয়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। করোনাকালে ধ্বংসের মুখে সংস্কৃতি অঙ্গন। চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে নাটক, গান, মঞ্চ নাটকসহ সংস্কৃতির সবকিছুতেই চরম মন্দা চলছে। এ থেকে উত্তরণের পথও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার সময়ে আসছে বাজেট। সেই বাজেটে সংস্কৃতিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। বরাবরই বাজেটে একেবারেই গুরুত্ব পায় না সংস্কৃতি খাত।
এবার একটু আলাদা নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষরা। জাতীয় বাজেটের সবচেয়ে কম বরাদ্দ এ খাতে। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক চর্চা। করোনাকালে সংস্কৃতিকে গতিশীল করার জন্য দরকার কার্যকর উদ্যোগ। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ নিয়ে বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটের প্রতিবেদক চপল মাহমুদ আলাপ চারিতায় তুলে ধরেছেন ।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার চর্চা না হয়ে আজ অন্য সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে। ফলে সংস্কৃতির উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করলে যে সংস্কৃতি মানুষকে মুক্ত ও স্বাধীন করবে, সেই সংস্কৃতিকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। এখন বৈশ্বিক মহামারীতে এ খাতকে বাঁচাতে হলে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা এখন ক্রান্তিকাল পার করছি। সংস্কৃতির সবকিছুই এখন বন্ধ। অনেকেই খুব কঠিন সময় পার করছেন। সংস্কৃতিকর্মীদের রক্ষা করতে বাজেটে বরাদ্দ তো বাড়াতেই হবে। পাশাপাশি বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে এ খাত চরম বিপদে পড়বে।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘সৃজনশীল শক্তিই বড় শক্তি। নাগরিকদের মধ্যে সৃজনশীল ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রথমেই ভাবতে হবে সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কথা। এ জন্য শুধু কেন্দ্র নয়, প্রান্তে-উপান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে সংস্কৃতিকে। গ্রাম-মফস্বল পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চা কমে গেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বাড়াতে চাই শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম। তাই প্রয়োজন পর্যাপ্ত বরাদ্দ।’
অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক রীতি ও আচার। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ আর অর্থের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। ফলে ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এ খাতের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা যেমন দরকার, তেমনি বেসরকারি উদ্যোগও দরকার রয়েছে।’
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সোহেল রানা বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কৃতির জন্য মাত্র শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ দেয়, যা খুবই হাস্যকর। সংস্কৃতিক্ষেত্রে সংকট চলছে। আমরা মাঠ হারিয়েছি, প্রেক্ষাগৃহ হারিয়েছি, পাঠাগার হারিয়েছি। পণ্য সভ্যতায় গা ভাসাতে গিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলেছি। রাষ্ট্র কিছু করছে না, সমাজ কিছু করছে না।’
Leave a Reply