:: শান্তা মারিয়া ::
আমি ১৪ মার্চের পর আর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হইনি। লিফটের কাছেও না। এ জন্য মোটেই বিষণ্ন বোধ করছি না। কারণ বেড়াতে গিয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে গৃহবন্দী করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাও ভালো। এটাও একটা যুদ্ধ বৈকি। আমি অবশ্য এই সময়ে বই পড়ছি, সিনেমা দেখছি, গান শুনছি, অনলাইনে ক্লাস নিয়ে চাকরিটাও ধরে রাখছি।
জীবন যখন যেমন, তেমনভাবেই তো চলতে হবে। অবশ্য যদি আমার জীবিকার প্রয়োজনে অফিসে যেতে হতো, তাহলে নিশ্চয়ই যেতাম। অপ্রয়োজনে ঘুরে নিজের ও সমাজের ঝুঁকি বাড়িয়ে কি লাভ? এই কোভিড-১৯ সংকট কেটে গেলে যদি বেঁচে থাকি আমি বেশ কয়েকটা দেশে বেড়াতে যাব। বসে বসে সেই নিয়ে পরিকল্পনা করি। মনকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই যে এখনও সুস্থ আছি।
আমি খুব লাকি ছোটবেলা থেকেই। আমার clinical ডিপ্রেশন নেই। বরং উল্টো। কেন জানি মোটামুটি বেশিরভাগ পরিস্থিতিতেই আমার মনের আনন্দ, স্থিরতা, সুমেজাজ এবং ধৈর্য্য বজায় থাকে। নিজের প্রশংসা নিজেই করছি। এটা আমার কৃতিত্ব নয়, সৌভাগ্য বলা যায়। আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়, যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে, নিজের চাওয়া পাওয়া, সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে বেশি ভাবে তখন হয়তো হতাশা বা বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে( clinical depression এর কথা বলছি না। সেটা যাদের থাকে তাদের চিকিৎসা ছাড়া গতি নেই। সেটা এড়ানোরও উপায় নেই)। ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ ধরণী পরে’ ছোটবেলায় পড়েছিলাম। আমি খুব ব্যাকডেটেড তাই এখনও মনে করি সমাজের অন্য মানুষদের সুখ দুঃখকে নিজের চেয়ে বড় করে দেখলে, সমাজের কল্যাণে ব্যস্ত থাকলে হতাশা কিছুটা কেটে যায়।
আমিও মাঝে মধ্যে ভাবি, আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে অনেক বেশি সফল হয়েছে জীবনে। তাদের তুলনায় আমি কিছুই করতে পারিনি। তারপর ভাবি আমার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতা নিয়েও তো অনেকে আমার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে। আর আলটিমেটলি সাফল্য বা ব্যর্থতা কী? এর মূল্যই বা কী? জন্মালাম, বেঁচে রইলাম, মরে গেলাম- এই তো জীবন। নিজেকে নিয়ে এত ভাবার কি আছে? এই জীবনে মানুষের ক্ষতি না করে, কাউকে গুরুতর আঘাত না করে, টিকে থাকা, সম্ভব হলে কারও উপকার করা, ব্যস- এর বেশি খুব কিছুর দরকার আছে কি? আত্মহত্যার কথা ভাবি না। বালাই ষাট। একদিন তো মরতেই হবে। আগেভাগে মরার দরকারটা কি? বরং শেষ মুহূর্ত অবধি বেঁচে থাকার চেষ্টা করাটাই তো মানুষের কাজ। I am the last person in this world to commit suicide. কে বলতে পারে জীবন কখন কোন দিকে মোড় নেবে। বেঁচে থাকলে লটারি পেয়েও তো যেতে পারি।
লেখক : সাংবাদিক
Leave a Reply