হাবিবুর রহমান- :: স্টাফ রিপোর্টার ::
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে সুমি নার্সারীর মালিক ওমর শরিফ তার নার্সারীতে বৈচিত্র্যময় প্রায় কয়েকশ’ প্রজাতির চারার বিশাল ভান্ডার গড়ে তুলেছেন। পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য । ধরা দিয়েছে সুখের ঠিকানা। গড়ে তোলেছেন ২০ বিঘা জমির উপর বিশাল নার্সারী। প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন সংগ্রহ করে প্রায় কয়েকশ’ প্রজাতির দেশি বিদেশী ফুল ফল সহ বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ করেছে তার নার্সারীকে। থেমে নেই জাত সংগ্রহ। বেড়ে চলেছে প্রজাতি। যে গাছ বা প্রজাতির নাম শুনেন সে দিকেই ছুটেন তিনি। সংগ্রহ করে আনেন প্রজাতি। এ ভাবে ওমর শরীফের সামনের দিকে এগিয়ে চলা।
মধুপুর শহর থেকে ৫কি.মি. দূরে অরণখোলা ইউনিয়নের কাকরাইদ গ্রামে গিয়ে কথা হয় নার্সাারীর মালিক ওমর শরীফের সাথে। তার সাথে কথা বলে জানা যায় নার্সারীর সাফল্যের কাহিনী। তিনি জানান, এক সময় ওমর শরী ফের পুঁজি ছিল না। ছিল না অর্থ বিত্ত। ছিল না কোন কর্মসংস্থান। ছিল শুধু মেধা আর বুদ্ধি। ১৯৮৮ সালের কথা।
আরও পড়ুন : করোনাকালেও কিস্তির টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন এনজিও কর্মীরা
এমন সময় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা স্থানীয় জলছত্র, কাকরাইদসহ বিভিন্ন এলাকার ৪৬ জনকে নার্সারীর উপর প্রশিক্ষণ দিবে শুনে সে এগিয়ে যায়। বনায়ন বা নার্সারীর উপর প্রশিক্ষণ করেন। শিখেন কিভাবে নার্সারী করে চারা উৎপাদন করা যায়। শুরু করেন নার্সারী। বাড়ির চারপাশে করেন নার্সারীতে চারা। সে বছর রাস্তার দু’পাশে প্রশিকা গাছ লাগানোর জন্য শরীফের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার চারা ক্রয় করে। অবশিষ্ট চারা অন্যত্র আরো ৭০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করে এতে ৫০ হাজার টাকা আসল তোলেন। লাভ আসে ৯০ হাজার টাকা। পরের বছর ২৫ মাইল নামক স্থানে আরো জমি বাড়িয়ে বড় করে গড়ে তোলেন নার্সারী। এ সময় কোল জুড়ে আসে কন্যা সন্তান। কন্যা সন্তানের নাম দেন সুমি। পরে ওমর শরীফ মেয়ের নামে নাম করণ করেন সুমি নার্সারী।
এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ান জমি। বাড়ে নার্সারী। বাড়ে চারা। এগিয়ে যায় ওমর শরীফে সুমি নার্সারী। ফুল, ফল, শোভা বর্ধন চারা উৎপাদন শুরু করেন। হাটে বাজারে নিয়ে যান চারা। বাড়ে পরিচিতি। আসে টাকা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সুমি নার্সারীর নাম। বিভিন্ন কৃষি মেলায় স্টল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে চারা বিতরণ করে ও দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য গাছের চারা উৎপাদনের জন্য প্রশাসন থেকে পুরো জেলায় সুনাম খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে কাকারাইদ টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে রাবার অফিস সংলগ্ন নিজের জমিতে নার্সারীকে ঢেলে সাজান। এখন তার নার্সারী প্রচুর জায়গা। যে কোন জাতের চারা উৎপাদন করতে কোন সমস্যা হয় না। এখন সব মিলিয়ে ২০ বিঘা জমির উপর বিশাল নার্সারী। তার নার্সারীতে ২০-২৫ জন শ্রমিক দৈনিক কাজ করে।
আরও পড়ুন : ওয়ারী ২১ দিনের জন্য লকডাউন
তার নার্সারী দেশি বিদেশী আম বারি-৪, কিউজাই, ব্রæনাই কিং আম কেজি ওজনের, রেড ম্যাঙ্গ,ব্লাক আম, কাশমেরী ফুল, আপেল ষ্টার, তিন ফল, থাই কাঁচামিঠা, এসবি-২, বেনানা ম্যাঙ্গ, কিউজাই, গৌরমতি, আলফানসো, কিং চাকাপট, বারোমাসি বারি-১১,দামভোল, মাই, বেনানা আম, ফোরকেজি, আলফানসো, হানিকিউ, ছোয়ানছো, থালান, সূর্যডিম, তোতাপুরি, থাইকাচামিঠা, চুকানান, থাইজাম্বুরা, আম, গেড়িমতি, থাইল্যান্ড, আমেরিকাপালমাল, আমেরিকাসুন্দরী, আমেরিকান ক্যান,আমরুপালিসহ প্রায় ৫০ জাতের দেশি বিদেশী আম চারা সমাহার সাজিয়েছেন।
এছাড়া, আম, জাইকলমের সাদা জাম,মিশরী তিনফল,মালয়েশিয়ান রামভুটান, এগ ফ্রুটস কাঠাল, পেয়ারা, থাইলিচু, রামভুটান, এবেকাডো, আলুবোখেরা, পিচফল, ইন্ডিয়ান কালো জাম, সুদানের সরিফা,মিরাক্কেল ফ্রুটস, স্ট্রোবেরী পেয়ারা, ডুরিয়ান হাইব্রীট লটকন, অলিব ফল, ভিয়েতনাম নারিকেল,ভিয়েতনাম লাল কাঁঠাল, হাইব্রীট কালো আঙ্গুর, বারি মাল্টা ১, চাইনা কমলা ,চাইনা আপেল, বারোমাসী কাঁঠাল,পানবিলাস, চেরী ফল, হাইব্রীট সুপারি বেদেনা, খেজুর, থাই জাম্বুরা বারো মাসি, জামালফল, সাতকরা, তৈকর, থাইসেভেন পেয়ারা, লটকন, বহেরা, আমলকি, কদবেল, সেকলেছলেবু, জামরুল, থাইমিষ্টি তেতুল, বেদেনা, ডালিম, পাকিস্তানী মালটা, আপেল, সাদা আপেল, কমলা, নাসপাতিসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির ফলের চারা রয়েছে।
আরও পড়ুন : বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত এম এ হক
অপরদিকে শোভাবর্ধন গোলাপ, রঙ্গন, বেলি, ৪ ধরনের জবা, জুই, থালতি, টগর, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, বাগানবিলাস, সাদা জিনিয়া, কসমস, সূর্য্যমূখী, চায়না টগর, পাতাবাহারসহ বিভিন্ন শোভাবর্ধন ফুলের চারা উৎপাদন করেন। তার নার্সারীতে দেশি, বিদেশি বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির চারা খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় করা হয়।
এখন আর ওমর শরীফের পিছনে তাকাতে হয় না। এলাকা থেকে শুরু করে কয়েক জেলার মানুষ সুমি নার্সারীর ওমর শরীফকে চিনেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, নার্সারী উন্নয়ন সংস্থা মধুপুরের দীর্ঘদিন যাবত সভাপতি ছিলেন। জলছত্র ট্রাক ড্রাইভার্স, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, এতিমখানা, বাজার সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত।
ওমর শরীফ বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে আরো জানান, তিনি পরিবেশের জন্য কাজ করতে চান। দেশি প্রজাতির চারা লাগানোর পরামর্শ তার। দেশি প্রজাতির ফলের গাছ লাগালে এদিকে পুষ্টি পাবে জনগণ অন্য দিকে অর্থ ও কাঠ দুই আসবে। তিনি সুন্দর ফুল ফল দিয়ে দেশকে ভরে দিতে চান । সকালে বিকালে অবসরে নার্সারী ঘুরে বেড়ালে তার খুব ভাল লাগে। অবসর সময়ে তিনি নার্সারীতে বসে সময় কাটান।
Leave a Reply