:: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ::
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা বৃষ্টিতে গত কয়েকদিন যাবৎ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে যমুনার পানি। এতে সৃষ্ট বন্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। ভূঞাপুর পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলসহ গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী নিকরাইল, অলোয়া ও ফলদা ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধীক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন-নতুন এলাকা। বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক।
সরেজমিনে দেখা যায়, চরাঞ্চলসহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই পানি প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ বাড়ীর বসত ঘরে পানি উঠায় বাঁশের মাচা করে আশ্রয় নিয়েছে । কেউ কেউ গবাদি পশু সরিয়ে নিয়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশই বাড়ীর গবাদিপশু পানিতেই রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পানিতে থাকলে এসব পশুর পায়ে ঘা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। দেখা দিয়েছে গো খাদ্য সংকট।
এ দিকে গতকয়েক দিনের অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের বিভিন্নস্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে। এ সব লিকেজ মেরামতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সড়কটি ভেঙ্গে গেলে জেলার প্রায় ৫টি উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে তারাকান্দি যমুনা র্ফাটিলাইজার সার কারখানাসহ দেশের উত্তরাঅঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া তলিয়ে যাবে উপজেলার হাজার-হাজার একর ফসলি জমি।
গাবসারার চরচন্দনী গ্রামের কৃষক রহিজ উদ্দিন জানান, এক দিকে নদীর পানি বাড়ছে, ভারি বর্ষণ এবং নদী ভাঙন। সব মিলে আমাগরে কষ্টের শেষ নাই। যা আবাদ করছিলাম সব বানে তলায়া গেছে। বাড়ী ঘর গরু ছাগল নিয়া রাস্তায় আশ্রয় নিছি।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩৭ টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত ছিন্নমূল পরিবারগুলো অতিকষ্টে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত যে ত্রাণ পেয়েছি তা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়ছে। তবে এ ত্রাণ দুর্যোগের তুলনায় খুব অপ্রতুল।
অর্জুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা জানান, আমার ইউনিয়নে ১৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু জানান, আমার ইউনিয়নে ১০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নিকরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার-‘আমার ইউনিয়নে ৩২টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।’
অলোয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রহিজ উদ্দিন আকন্দ জানান-‘ইউনিয়নের প্রায় সকল গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করে বীজতলা তলিয়ে গেছে, এছাড়া উঠতি আউস-আমন ধান ও শাক-সবজি তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।’
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান- ‘যমুনার পানি ভূঞাপুর অংশে বিপদসীমার ১০৫সেন্টিমিটার উপরদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গারাবাড়ি ও বলরামপুরে লিকেজ দেখা দেয়ায় আমি সারারাত উপস্থিত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছি এবং ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের যেখানে লিকেজ দেখা দিচ্ছে সেখানেই জিও ব্যাগ ফেলে বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি।’
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. নাসরীন পারভীন জানান-‘এ উপজেলার বন্যা কবলিত পরিবারের মধ্যে বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং আবারো ৬০ মেট্রিক টন চাল, শুকনো খাবারের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ৫শত প্যাকেট, শিশু খাদ্যের জন্য ৩০ হাজার এবং গো খাদ্যের জন্য ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ৪০ মেট্রিক টন চাল চেয়ারম্যানরা বিতরণ করছে। গোবিন্দাসী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এবং ভূঞাপুর স্লুইস গেট থেকে নলিন পর্যন্ত তারাকান্দি রাস্তায় যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদের মাঝে আমি রাতে চাল ডালসহ শুকনো খাবার রাতে ঘুরে ঘুরে বিতরণ করেছি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি শুক্রবার বিকেলে বন্যা কবলিত ঝুঁকিপূর্ণএলাকা তাড়াই বলরামপুর বাঁধ পরিদর্শন করেন। চরাঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দেন।
Leave a Reply