• রবিবার ৩০ জুন, ২০২৪
logo

ভালো ফলনেও মুখে হাসি নেই চাষিদের

মো. ইউনুস ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ৪৯:০২ এএম 5 682 views

বৈরি আবহাওয়া আশঙ্কায় মাঠের পাঁকা বোরো ধান ৭০ ভাগ কাটেছে চাষিরা। ফলনের সাথে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তাদের মন খারাপ। বিগত বছরের চেয়ে ফলনও ভালো। জমি প্রস্তুত ও ধান মাড়াই করে ঘরে তোলা পর্যন্ত মোট খচরে না পুষায় তাদের কাহিল অবস্থা। প্রচন্ড তাপদাহে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি দ্বিগুণ।
   
                  চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। নেক ব্লাস্টা (কারেন্ট রোগ) আক্রমণে শেষ মুর্হূতে অনেক চাষি হতাশ। তবুও স্বপ্ন বেঁধে ভোর থেকে সন্ধ্যাবদি ধান কাটা ও মাড়াইয়ে চাষি ব্যস্ত। হার্বেষ্টারে ধান কাটায় কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বোরো মৌসুমে ১০ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ। উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে ব্রি-৭৯, ৮৮, ৯২, ৯৬, ১০২, বঙ্গবন্ধু-১০০ এবং শেখ রাসেল। প্রণোদনার আওতায় দেয়া হয়েছে সার-বীজ ও প্রদর্শনী। মাঠে গিয়ে পরামর্শ প্রদান করেছে কৃষি কর্মকর্তারা। ‘সমলয়’ পদ্ধির চাষবাদে বেশি লাভবান কৃষকরা। ইতিমধ্য ৭০ ভাগ জমির ধান কর্তন হয়েছে এবং ১৩ টি হার্বেষ্টারে চলছে ধান কর্তনের কাজ।

          সরেজমিনে গত ক'দিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পুরোদমে ধান কাটার মৌসুম চলছে। চাষি পাঁকা ধান ঘরে তুলতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে ব্যস্ত। শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হাজার টাকা থেকে কিছুটা কমেছে। খরচ কমাতে হার্বেষ্টার ব্যবহার হচ্ছে। নিজ জমির ধান কাটতে দেখা যায় অনেক চাষিকে। নেক ব্লাস্টার আক্রমণে অনেক চাষিরা একেবারে হতাশ। কপালে চিন্তার ভাঁজ। ‘স্বপ্নভঙ্গ’ হয়ে গেছে চাষিদের।
 
চরভাতকুড়া গ্রামের মাঠে শ্রমিক দিয়ে ধান কাট ছিলেন চাষি পলাশ ইসলাম। তিনি বিডি নিউজ বুককে বলেন, ‘৭ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। জমি তৈরী, হালচাষ, সেচ, সার-বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিক দিয়ে ধান আবাদে খরচ ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা।’

              তিনি আরও বলেন,  ‘বিঘা প্রতি ধান পাওয়া যাচ্ছে ২০-২৫ মণ। বর্তমানে ধানের বাজার  ৮‘শত টাকা কিছুটা ওপড়ে। এতে করে কোনো লাভ থাকছে না কৃষকদের।’
 
ব্রি ৮২-৮৯ জাতের ৩ বিঘা জমির ধান চাষি মুশুদ্দি গ্রামের আনছার আলী বিডি নিউজ বুককে বলেন, ‘একজন ধান কাটা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১ হাজার টাকা। বিঘায় শ্রমিক লাগে কমপক্ষে ৫ জন। চারা রোপনেও একই খরচ। যারা কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ব্যবহার করছে তাঁরা কিছুটা লাভের মুখ দেখেছে বলে জানান এই কৃষক।’

                উত্তর মিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সৈয়দ সাজন আহমেদ রাজু বলেন, ‘২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছিলাম। সমস্ত খরচ বাদে লোকসানে পড়েছি।’ 

কয়ড়া এলাকার কৃষক আয়নাল হক দুঃখ প্রকাশ করে বিডি নিউজ বুককে বলেন, ‘সঠিক পরিচর্যা করেও ৪ বিঘা জমিতে শেষ মুহূর্তে কারেন্ট পোকা রোগ হয়। একেবারেই সর্বনাশ। বিঘায় ধান পেয়েছি ৮ মণের কম।’

              ধনবাড়ী বাজারের ধানের আড়ৎদার শিহাব ট্রের্ডাসের মালিক বিডি নিউজ বুককে মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মোটা ধান ৮৭০ থেকে ৯২০, চিকন ৯৩০, শোকনা তেজ ১ হাজার থেকে ১১’শত টাকা এবং পর্যাক্রমে ধানের মান অনুযায়ী ক্রয় কারা হচ্ছে। 

এদিকে. ধনবাড়ীর শ্রমিক হাঁটি চৌরাস্তা (কামলার হাঁট) ভোরে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক শ্রমিক এসেছে ধান কাটতে। তাঁরা বলেন, ‘আমরা মধ্যবৃত্ত পরিবার। বছরে দুই মৌসুমে মাসব্যাপী কাজ করা যায় এখানে। যাওয়ার সময় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যেতে পারি।’ 

                উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান  বিডি নিউজ বুককে বলেন, ‘চলতি মৌমুমে উপজেলায় ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা'র চেয়ে ৬০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে ধান। বিঘায় উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান হচ্ছে প্রায় ৩০ মণ। সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। শ্রমিক দিয়ে নয় কৃষকদের হার্বেষ্টারে ধান কাটতে উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে।’